ঘুস লেনদেনে জড়িত ভূমি কর্মকর্তাকে আবারও আগের কর্মস্থলে বহাল
দুইমাস আগে বদলি
প্রথম নিউজ, নওগাঁ: নওগাঁর আত্রাইয়ে প্রকাশ্য ঘুস নেওয়াসহ সেবাগ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদার বিরুদ্ধে। এর প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী।
দুইমাস আগে ঘুস লেনদেনে জড়িত থাকাসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুরুল হুদাকে হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে আত্রাই উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করেছিল উপজেলা প্রশাসন। তবে এর কয়েকদিনের মধ্যেই অজ্ঞাত কারণে আবারও তাকে আগের কর্মস্থলে বহাল করে জেলা প্রশাসন। এতে লাগামহীনভাবে ওই অফিসে বেড়েছে ঘুস লেনদেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আত্রাই উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের আজহারুল ইসলাম পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আটগাঁও মৌজার জমি নামজারি করতে কিছুদিন আগে অনলাইনে আবেদন করেন। জমিটি হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতাধীন হওয়ায় নামজারির করতে গত ৩০ নভেম্বর ওই অফিসে যান তিনি। সেখানে গেলে তার কাছ থেকে প্রথমেই চার হাজার টাকা ঘুস নেন ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী দুরুল হুদা। এর কিছুদিন পর ওই সেবাগ্রহীতাকে ডেকে দুরুল হুদা খাজনা ৪০ হাজার টাকার বেশি এসেছে বলে জানান। সেইসঙ্গে খাজনার টাকা ছাড়াই নামজারি করে দেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। বিনিময়ে ঘুস দেন আরও ১১ হাজার টাকা।
এরপর আবারও দুই দফায় দুরুল হুদা ঘুস নেন ১০ হাজার টাকা। এভাবে কয়েক দফায় মোট ২৫ হাজার টাকা ঘুস নেন তিনি। এর প্রতিকার চেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই ভুক্তভোগী।
আরেক ভুক্তভোগী হাকিম উদ্দিন বলেন, ‘পাইকড়া বড়াইকুড়ি মৌজায় আমার সাড়ে ৮ কাঠা জমি খারিজ (নামজারি) করা ছিল। ওই জমির খাজনা দিতে এলে দুরুল হুদার সঙ্গে থাকা খাঁজা নামের এক যুবক অফিসের ভেতরেই চার হাজার টাকা ঘুস চান। ঘুস ছাড়া কাজ করে দিতে অনুরোধ করলে দুরুল হুদার সামনেই তিনি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এই অফিস পুরোটাই দুরুল হুদার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদা তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কারো কাছ থেকে কখনো ঘুস নেইনি। আজহারুলের জমিতে যে খাজনা আসবে সেটাই লিখে দিয়েছি। এছাড়া খাঁজা নামে আমার কোনো ব্যক্তিগত সহকারী নেই। সে অফিসের টুকটাক কাজ করে দেয়। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’
উপজেলায় সংযুক্তের কয়েকদিন পর আবারও আগের কর্মস্থলে কীভাবে পুনর্বহাল হলেন, এমন প্রশ্নে ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন দুরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘এটা ডিসির থেকে জেনে নিবেন। বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি অফিস প্রধান হওয়া সত্ত্বেও দুরুল হুদা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গেও একই অবস্থা।’
হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস শুকুর সরদার বলেন, ‘ওই ভূমি অফিসে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে ঘুস নেন দুরুল হুদা। ঘুস না দিলে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। কয়েকমাস আগে দুরুল হুদাকে উপজেলায় সংযুক্ত করা হয়েছিল। এরপর নিজের প্রভাব খাঁটিয়ে সে আবারও এখানে নিজেকে পুনর্বহাল করেছেন।’
আত্রাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অঞ্জন কুমার দাস বলেন, হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদার বিরুদ্ধে ঘুস লেনদেনের অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী। অভিযোগটি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুরুল হুদার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস আগে দুরুল হুদাকে উপজেলা কার্যালয়ে সংযুক্ত করার পর আবার কেন একই কর্মস্থলে পুনর্বহাল করা হলো, জানতে চাইলে অঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘এখানে আমার কিছুই করার ছিল না। বদলির বিষয়টি সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে দুরুল হুদার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আগেই জানিয়েছিলাম। এখানে তিনি চাইলে জেলা প্রশাসকের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারবেন।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, ‘দুরুল হুদাকে নানান অভিযোগের কারণে এসিল্যান্ড অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছিল। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলাম। এরপরও তিনি তাকে আবারও আগের কর্মস্থলে বহাল করেছেন। এখানে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির নিয়ন্ত্রক তিনি। তাই আমাদের কিছুই করার নেই।’
জানতে চাইলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, দুরুল হুদা নামে ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ সম্পর্কে আত্রাইয়ের ইউএনও আগে আমাকে জানাননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।