গাজায় মানবিক সংকট
বুধবার গাজায় একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। উপরন্তু গাজার চারদিকে পূর্ণাঙ্গ অবরোধ আরোপ করেছে ইসরাইল। খাদ্য, জ্বালানি, পানিসহ সব মৌলিক সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। বুধবার গাজায় একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওই মৃত্যু উপত্যকায় বসবাসকারী মানুষগুলো খাদ্য, পানি, জ্বালানি, ওষুধ সংকটে অবর্ণনীয় এক জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহের অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, গাজায় জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম, যেমন খাদ্য, জ্বালানি ও পানি অবশ্যই সরবরাহের অনুমতি দেয়া উচিত। ওদিকে ইসরাইলের হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাবেক প্রধান কেনেথ রোথ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
ওদিকে গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৫৬০০ মানুষ। গাজায় যেসব হাসপাতাল আছে তাতে অবর্ণনীয় এক দৃশ্য। হতাহতদের স্থান দেয়ার জায়গা নেই। মর্গ উপচে পড়ছে লাশে। আত্মীয়স্বজনরা ভিড় করছেন প্রিয়জনের লাশের জন্য। আহতরা আর্তনাদ করছেন। তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে র্যালি হয়েছে চিলি, আয়ারল্যান্ড, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এমন র্যালি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন শহরে র্যালি হয়েছে। সবচেয়ে বড় র্যালি হয়েছে শিকাগোতে।
চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে শত শত মানুষ র্যালিতে অংশ নেন। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে এই দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ফিলিস্তিনি অবস্থান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় র্যালি হয়েছে ফিলিস্তিনের ভূমি ৭৫ বছর অবৈধভাবে দখল করে রাখার বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাবেক প্রধান কেনেথ রোথ বলেছেন, গাজায় মানবাধিকার বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করছে ইসরাইল। তারা ফিলিস্তিনি এসব জনগণকে তাদের মৌলিক অধিকার বঞ্চিত করার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।
যেখানে মানবাধিকার অত্যাবশ্যক সেখানে ইসরাইল সরকার অবরোধ আরোপ করেছে পুরো গাজায়। কেনেথ রোথ বর্তমানে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। বলেন, ইসরাইলের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে হামাস যে নৃশংসতা চালিয়েছে, ফিলিস্তিনি বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ ও ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’ দেয়ার ক্ষেত্রে তা যথার্থ কোনো কারণ হতে পারে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের আইন বলে, এক পক্ষের যুদ্ধাপরাধকে অন্যপক্ষের যুদ্ধাপরাধের পক্ষে যুক্তি হিসেবে কখনোই দাঁড় করানো যায় না। যুদ্ধের আইনের পক্ষে উভয় পক্ষকে স্বতন্ত্রভাবে সম্মান দেখাতে হবে। ইসরাইলি সেনারা যথাযথ ‘কেয়ার’ না করেই বেসামরিক লোকজন সহ সবার ওপর হামলা চালাচ্ছে। এ ধরনের বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য হামলাও একটি যুদ্ধাপরাধ।
ওদিকে দখলীকৃত পশ্চিমতীরের জেনিন এবং ক্বলকলিয়া শহরে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনীর লড়াই হচ্ছে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে একটি ভবনের অন্য পাড় থেকে আগুনের গোলা আকাশে উঠে যাচ্ছে। বিকট শব্দে সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। আরও শোনা গেছে গুলি বিনিময়ের শব্দ। অন্য একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, ক্বলকলিয়া শহরে একটি ভবনের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা।