মধুখালীতে অনুমতি ছাড়াই চলছে মেলা, মাইকের উচ্চশব্দে বিপাকে পরীক্ষার্থীরা
প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালীতে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই শুরু হয়েছে ৯ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। মধুখালী পৌর এলাকার পশ্চিম গাড়াখোলা মাঠে মেলায় দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজানোর কারণে বিপাকে পড়েছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। গত ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলা করার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতির একটি আবেদন জমা দিয়েই মেলা শুরু করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে প্রশাসনের অনুমতির অপেক্ষা করেনি তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেলায় নানা ধরনের আয়োজন থাকলেও লটারি ও জুয়ার আসর বসেছে। এটি কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া গভীর রাত পর্যন্ত মেলার মাইক ও সাউন্ড বক্সে উচ্চশব্দে বাজছে হিন্দি গান। ফলে এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা চেয়ারম্যান তার নিজের ক্ষমতা বলে এ মেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মেলা কমিটির সভাপতি এবং মধুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাসেম আবুলকে মেলার সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে এ মেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, মেলায় ৩ শতাধিক বিভিন্ন পণ্যের স্টল রয়েছে। প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয়রা জানান, এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে মেলা কোনো মতেই করা ঠিক হয়নি। মেলার মাইক ও সাউন্ড বক্সের উচ্চশব্দে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। মেলার আয়োজক কমিটি টাকা রোজগারের জন্য পরীক্ষার মধ্যেই মেলা চালু করেছে, যা নিন্দনীয়। দ্রুত মেলা বন্ধে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের যানবাহন রাখার জন্য রেলস্টেশনের জায়গা দখল করে পার্কিং জোন করা হয়েছে। যেটি দেখভাল করছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোটভাই। জায়গাটি দখল করে গাড়ি পার্কিং করায় রেলে যাতায়াতকারী মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন। এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারছেন না বলে তারা জানান।
মধুখালী স্টেশন মাস্টার জানান, এ বিষয়ে তিনি নিরুপায়। তিনি অনুমতি না দিলেও কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জায়গাটি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ঘেরাও করেছে। মধুখালী চিনিকলসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতকারী রাস্তাটির দুই প্রান্তে বাঁশ দিয়ে ঘেরাও দেওয়ার কারণে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। এ নিয়ে মেলা আয়োজনকারীদের সঙ্গে সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের বাদানুবাদ হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেলায় লটারি ও জুয়া হচ্ছে প্রকাশ্যে। মেলার মাঠ সংলগ্ন এলাকাসহ আশপাশে জুয়ার বোর্ড বসানো হয়েছে। সেখান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম করে টাকা উঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। মেলা আয়োজনের বিষয়ে মধুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, মধুখালীর মেলাটি একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-কমিউনিস্ট পার্টি মিলেমিশে মেলার আয়োজন করে। মেলার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এখনো তারা অনুমতি পাননি।
অনুমতি না পেয়েও কেন মেলার আয়োজন করলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মধুখালীর এ মেলাটি একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। এ বিষয়ে মেলার সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিকুর রহমান জানান, মেলার জন্য আবেদন পাবার পর তিনি তা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে এখনো মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, মধুখালীর মেলার বিষয়ে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। মেলা কমিটিতে বলে দেওয়া হয়েছে মেলাটি বন্ধ করার জন্য।