ফের আকাশে রহস্যময় বস্তু : বিমান পাঠিয়ে ভূপাতিত করল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়তে থাকা ‘রহস্যময়’ একটি বস্তুকে ভূপাতিত করেছে দেশটির বিমানবাহিনী
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়তে থাকা ‘রহস্যময়’ একটি বস্তুকে ভূপাতিত করেছে দেশটির বিমানবাহিনী। শুক্রবার দেশটির সর্বউত্তরের অঙ্গরাজ্য আলাস্কার আকাশে উড়তে থাকা বস্তুটিকে মার্কিন বিমানবাহিনী গুলি করে নামিয়েছে বলে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি ও মুখপাত্র জন কিরবি।
শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও বাসভবন হোয়াইট হাউসে আয়োজিত সেই সংবাদ সম্মেলনে বস্তুটি ছিল ছোট আকারের একটি গাড়ির সমান এবং সেটি দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ‘ব্যাপক হুমকি’ হয়ে উঠতে পারত।
তবে বস্তুটি ঠিক কী ছিল— সে সম্পর্কে কিছু ভেঙে বলেননি কিরবি। তেমনি কোথা থেকে এবং সম্ভাব্য কোন উদ্দেশ্যে এটি এসেছিল— সেই ইঙ্গিতও দেননি তিনি।
‘বস্তুটি ৪০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ছিল, তাই উড়োজাহাজ চলাচলে ঝুঁকি বিবেচনায় সেটি ভূপাতিত করা হয়েছে।’
হোয়াইট হাউসের এই মুখপাত্র আরও জানান, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজে সামরিক বাহিনীকে বস্তুটি ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি এই নির্দেশ দেওয়ার পরই যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে সেটি ভূপাতিত করা হয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশ পাওয়ার পর আলাস্কার আকাশে এফ-২২ র্যাপ্টর যুদ্ধবিমান ওড়ানো হয়। পরে সেটি এআইএম-৯এক্স ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে রহস্যজনক বস্তুটি ধ্বংস করে।
ন, এই একই যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে চীনা গোয়েন্দা বেলুনটিও ধ্বংস করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
গত ২ ফেব্রুয়ারি পেন্টাগন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে; এবং প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ সেই বেলুনটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার ওপর দিয়ে উড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেন্টাগনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আরও জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা বেলুনটি গুলি করে ভূপাতিত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে বেলুনটি যেসব এলাকার ওপর দিয়ে উড়ছিল, সেখানে বসবাসরত মানুষের ক্ষতি হতে পারে— বিবেচনায় পরিকল্পনাটি বাতিল করেন তারা।
পরে ৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বেলুনটি ধ্বংস করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়ে। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দেয়, ওই ধ্বংসাবশেষ তারা চীনকে ফেরত দেবে না।
এ ঘটনায় চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাঁর চীন সফর স্থগিত করেন। ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুনের অনুপ্রবেশ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইনপরিপন্থী কাজ।
‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে দুঃখ প্রকাশ করে চীন। দেশটির দাবি, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো এ বেলুন বাতাসে ভেসে পথ ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেলুনটি আকাশে ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে সেটি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির আকাশসীমায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেলুনটি উড়ে যাওয়ার এ ঘটনার জন্য বেইজিং অনুতপ্ত।
কিন্তু সেই বেলুনটি ভূপাতিত করার এক সপ্তাহের মধ্যে ফের একই ঘটনা ঘটল।