কোনো কথা ছাড়াই ছয় মাস ধরে তারা আমাকে মারধর করেছে: মশিউর রহমান
রহমান বলেছেন যে, তাকে কয়েকদিন ধরে চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। হাত বেঁধে ছাদে ফেলে রাখা হয়েছিলো এবং অজানা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মৃত্যুদণ্ডের হুমকি দেয়া হয়েছিল।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: পূর্ব লন্ডনের অ্যাপার্টমেন্টে বিকেলের চা খেতে গিয়ে তার স্ত্রী এবং ছোট ছেলের সাথে টেবিলের দিকে ঠেকে যাওয়ার সময় রীতিমতো খোঁড়াচ্ছিলেন মশিউর রহমান। তার পায়ের জয়েন্টে ব্যথা প্রতিদিন তাকে মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের সাথে যোগসূত্রের কারণে তার ওপর হওয়া অত্যাচারের কথা। রহমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে বার্কিং-এ চলে এসেছিলেন। কিন্তু ২০১৫ সালে স্বদেশে একটি সংক্ষিপ্ত সফরের সময় তাকে বিমানবন্দরে আটক করা হয় এবং অকথ্য নির্যাতন করা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘প্রবলভাবে’ কোনো বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর কোনো ধরনের ক্র্যাকডাউনে কথা অস্বীকার করেছে। রহমান বলেছেন যে, তাকে কয়েকদিন ধরে চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। হাত বেঁধে ছাদে ফেলে রাখা হয়েছিলো এবং অজানা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মৃত্যুদণ্ডের হুমকি দেয়া হয়েছিল।এমনকি কারণ ছাড়াই তাকে মারধর করা হতো। রহমান জানাচ্ছেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সাথে অনেকদিন আগেই আমার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। কিন্তু তারা আমার সাথে কথা না বলেই আমার সারা শরীরে ছয় মাস ধরে প্রহার করেছে। যন্ত্রণাটা অসহ্য ছিল।
আমি ভেবেছিলাম ওরা আমাকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলবে। আমার ছেলে মেয়ে এবং স্ত্রী কখনোই জানবে না যে আমাকে হত্যা করা হয়েছে।’ কঠোর শর্তে মুক্তি পেয়েও তিনি ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ত্যাগ করতে অক্ষম হন। অবশেষে তার স্ত্রীর আশ্রয়ের দাবি মঞ্জুর হবার পরে লন্ডনে পরিবারের সাথে পুনরায় মিলিত হবার সুযোগ পান মশিউর। এখনো যন্ত্রণার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না মশিউর রহমান।বিবিসি স্থানীয় হেলথ ট্রাস্ট থেকে নির্যাতনের শিকার হওয়া রহমানের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যর রিপোর্ট দেখেছে। যদিও বিবিসি লন্ডনের কাছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো সহিংসতা, নির্যাতন বা গুম হওয়ার ঘটনাকে জোড়ালোভাবে অস্বীকার করেছে এবং যোগ করেছে যে, রাজনৈতিক দলের সদস্যদের উপর ক্র্যাকডাউনের অভিযোগগুলি ‘পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হয়েছে’।
২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন চতুর্থ মেয়াদের জন্য নির্বাচনে লড়ছেন। তিনি হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবারনের লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকির খালা। লন্ডনের বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে রাজধানীতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাবরণ এবং দেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যে হাসিনার সরকারের কথিত ভয়ভীতি ও দমন-পীড়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে এই বিক্ষোভে ।
এদিকে হাসিনা এই অস্থিরতার জন্য বিএনপি ও তার মিত্রদের দায়ী করেছেন, তাদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ এনেছেন। প্রধান বিরোধী দলগুলি নির্বাচন বর্জন করেছে এবং তাদের অনেক নেতাকে কারাগারে বন্দী করা হয়েছে। হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ সংসদীয় মেয়াদের জন্য পুনরায় নির্বাচিত হতে পারে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবিসি লন্ডনকে জানিয়েছে, তারা ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন সংঘটিত করার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
সূত্র : বিবিসি , লেখক : গাই লিন , অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, বিবিসি লন্ডন