মাহিয়া মাহিকে নিয়ে দিনভর নাটকীয়তা

গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পর মামলা, সকালে গ্রেপ্তার, বিকালে মুক্তি

মাহিয়া মাহিকে নিয়ে দিনভর নাটকীয়তা
মাহিয়া মাহিকে নিয়ে দিনভর নাটকীয়তা

প্রথম নিউজ, গাজীপুর: চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির ফেসবুক লাইভ থেকেই ঘটনার জটিলতা শুরু। শুক্রবার সৌদি আরব থেকে ফেসবুক লাইভে তিনি অভিযোগ করেন তার স্বামী রকিব সরকারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করা হয়েছে। দেড়  কোটি টাকার বিনিময়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছেন। মাহির এই লাইভ প্রচারের পর রাতেই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। রাতেই তার এবং স্বামীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন ইসমাইল হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি। ফেসবুক লাইভে মাহি জানিয়েছিলেন দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন। গতকাল সকালেই তিনি দেশে ফেরেন ঠিকই কিন্তু সংবাদ সম্মেলন আর করতে পারেননি। বিমানবন্দরে নামতেই তাকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর পুলিশ। ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মাহিয়া মাহি বোরকা পড়ে হুইল চেয়ারে করে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। 

তাকে সরাসরি নেয়া হয় আদালতে। দুপুরে গাজীপুর মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫ এর বিচারক মো. ইকবাল হোসেন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে ৩ ঘণ্টার মাথায় একই আদালত থেকে আবার জামিন দেয়া হয় মাহিকে। তখন বলা হয়, সেলিব্রিটি ও অন্তঃসত্ত্বা বিবেচনায় আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। জামিনের পর রাতেই কারাগার থেকে মুক্তি পান মাহি। এদিকে মাহিকে গ্রেপ্তার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিনভর তৎপর ছিল গাজীপুর মহানগর পুলিশ। দুপুরে মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে মাহির স্বামীর প্রতিপক্ষকে সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। আইন অনুযায়ী মাহিকে গ্রেপ্তারের কথাও বলেন কমিশনার। তিনি বলেন, ব্যক্তি পরিবার এবং পুলিশকে নিয়ে মর্যাদাহানিকর বক্তব্য দেয়ায় মাহির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ওদিকে দেশে এসে গ্রেপ্তার হলেও মাহির স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা রকিব সরকার মক্কা থেকে দেশে ফেরেননি। 

মেট্রোপলিটন হেডকোয়াটার্স হলরুমে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মোল্যা নজরুল বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসত্য ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে পুলিশ কমিশনার, পুলিশ বিভাগ ও পারিবারিক ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করায় গতরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড প্রার্থনা করা হবে। মাহিয়া মাহি ছাড়াও নগরের দীঘিরচালা এলাকার ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের দায়ের করা মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই মামলায়ও হুকুমের আসামি হিসেবে রয়েছেন চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার। এ ছাড়াও রকিব সরকারের নামে এর আগে হত্যা, ধর্ষণ ও অস্ত্র আইনে ৩টি মামলা হয়েছিল। সাক্ষী প্রমাণের অভাবে সেই মামলাগুলোর ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে সাক্ষী প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তাই মামলাগুলো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে।  গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন জানান, মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি এবং মারধর, ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে অপর একটি মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে বাসন থানার উপ-পরিদর্শক মো. রোকন মিয়া বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাহি দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ছাড়া একই রাতে অপর মামলাটি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন। 

এর আগে মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার জমি ও শোরুম নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে ও গাজীপুর মহানগর পুলিশকে জড়িয়ে ওমরাহ হজ পালন করতে গিয়ে মক্কা থেকে ফেসবুক লাইভে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। অন্যদিকে, ইসমাইল হোসেন তাদের বিরুদ্ধে মারধর, কারখানা ভাঙচুর ও জমি দখলের অভিযোগ তুলে ধরেন।  গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন জানান, ফেসবুক লাইভে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামসহ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন মারধর, ভাঙচুর, চাঁদাদাবি ও জমি দখলের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে হুকুমের আসামি করে ২৮ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলা দুটোর বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি মক্কা থেকে রওনা দেয়ার আগে শুক্রবার মধ্যরাতে আবারো ফেসবুক লাইভে যুক্ত হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। শনিবার সকালে দেশে পৌঁছাবেন জানিয়ে, এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে গ্রেপ্তার হতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সময় তার স্বামী রকিব সরকারও তাদের শোরুমে হামলা ও সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেন।

অন্যদিকে, নগরের ইটাহাটা এলাকার রড বাইন্ডিং কারখানার মালিক ইসমাইল হোসেন জানান, জমি কিনে কমপক্ষে ১০ বছর ধরে তিনি কারখানা বানিয়ে তাতে দখলে রয়েছেন। বর্তমান বাজার দরে প্রায় ৪ কোটি টাকা দামের এই জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধে উচ্চ আদালতেও তার পক্ষে রায় রয়েছে। এরপরও শুক্রবার ভোরে রকিব সরকার ও তার স্ত্রীর লোকজন অতর্কিত হানা দিয়ে তাদেরকে মারধর করে অন্তত ৫ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে এবং জবরদখলের চেষ্টা করে। তিনি পুলিশ কর্মকর্তা ও সরকারের প্রতি এর সুষ্ঠু প্রতিকার দাবি করছেন। তিনি আরও জানান, এর আগে এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

এর আগে শুক্রবার ভোরে মাহিয়া মাহির ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে রকিব সরকারের গাড়ির শোরুমে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ তোলেন ইসমাইল হোসেন ও মামুন সরকারের বিরুদ্ধে। তারা লাইভে জানান, গাজীপুর মহানগরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্বপাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সনি রাজ কার প্যালেস নামের গাড়ির শোরুম দখলের উদ্দেশ্যে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। দীর্ঘ সময়ের লাইভে তারা এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে কমিশনারের বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকা ‘ঘুষ নেয়ার’ অভিযোগও করেন। রকিব সরকার  জানান, তিনি ওই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ির শোরুম তৈরি করে ব্যবসা করে আসছেন। জমির কাগজপত্রসহ সবকিছুই তার নামে রয়েছে। কিন্তু ওই জমি থেকে বেদখল করার অপচেষ্টার বিষয়টি এরই মধ্যে তিনি সরকারের বিভিন্ন মহলে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন।

ফেসবুক লাইভে মাহিয়া মাহির অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করেছেন, মিথ্যা বলে মানুষের সহানুভূতি নেয়ার চেষ্টা করেছেন। যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদেরও আমি চিনি না।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: