পাবনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

আজ শনিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ছাড়া বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক সম্মিলিতভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। 

পাবনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন

প্রথম নিউজ, পাবনা: পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত ও তার বিচারের দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষকেরা। আজ শনিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ছাড়া বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক সম্মিলিতভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। 

লিখিত অভিযোগে তারা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করাসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত। কেউ এই অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে তাকে নানা হয়রানি ও হুমকি দেন, এমনকি মারধরও করেন। তার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। সম্প্রতি তিনি আব্দুল হক নামের এক সিনিয়র শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছেন। সেই ঘটনার তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নানা হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।’ 

প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তারা বলেন, ‘২০০৭ সালে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক অবসরে গেলে সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শওকত আলী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন। তখন জুনিয়র শিক্ষক আনোয়ার হোসেন দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে শওকত আলী স্যারকে অপহরণ করিয়ে ভয় দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন। ৭ বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় সে বিএড সার্টিফিকেট ক্রয় করেন এবং কম্পিউটার শিক্ষক থেকে জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নেন। তিনি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়ে আগের সহকারী শিক্ষক পদেরও ৩-৪ বছরের বেতন গ্রহণ করেছেন। একই ব্যক্তি প্রধান শিক্ষক পদে এবং কম্পিউটার শিক্ষক পদে কিভাবে থাকলেন? তার বিএড সার্টিফিকেটও অবৈধ, কারণ ছুটি না নিয়ে চাকরিকালীন বেতন-ভাতা গ্রহণ করে কীভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করেন?’ 

‘২০১৯, ২০২০, ২০২১ সালের বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ লাখ টাকার কোনো হদিস নেই। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্কুলের জায়গায় নিজের গোয়াল ঘর তৈরি করে গরুর ব্যবসা করতেন। যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের মার্কেট নির্মাণে বিভিন্ন রড সিমেন্ট, বালি নিজে সরবরাহ করেন। সেখান থেকে প্রায় এক কোটি টাকা এবং মার্কেটের রুম নিজে ব্যবহার ও ভাড়া খাটিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও মার্কেটের রুম বিক্রি, পুকুর ভরাট, শতবর্ষী মেলার লাখ খানেক টাকা, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ৫০ লাখ টাকা, গেট তৈরির ২০ লাখ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি স্কুলের ভবন নির্মাণের থাকা ১৫ থেকে ২০ হাজার ইট নিয়ে নিজের বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করেছেন। ’ 

শিক্ষকরা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মার্কেটে নিজের নামে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংক শাখা পরিচালনা করে আসছেন তিনি। ১৬, ১৭ ও ১৮ অর্থ বছরের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেওয়ার কথা বলে বেতন লেজারে সই করিয়ে নিলেও তাদের কোনো টাকা পয়সা না দিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেন। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির রেজুলেশনও আটকে রেখেছেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকদের উপর নির্যাতন নীপিড়ন চালিয়ে আসছেন। বিদ্যালয়ের সভাপতির কাছে অভিযোগ দিলেও তিনি শিক্ষকদের নিয়ে বসেননি বা সমাধান করেনি। দুর্নীতির বিষয়ে একাধিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হলেও শিক্ষা অফিসে তদন্ত সাপেক্ষে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। প্রধান শিক্ষকের এইসব অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সহকারী প্রধান শিক্ষক তাপসি রাবেয়াও জড়িত।’ 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক আব্দুল হক, আসাব উদ্দিন, আকমল হোসেন, বাবুল কুমার কর্মকার, মোছা. সবনম মোস্তারী, গোলাপী রানি সরকার, শহিদুর রহমান, জিলাল উদ্দিন, আব্দুস শুকুর, কামাল হোসেন, সুজন আলী খান, ছাবিনা ইয়াসমিন ও জামাল হোসেন। এবিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা কী জন্য এসব করছেন আমি জানি না। তাদের উত্থাপিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট, এর কোনো ভিত্তি নেই। তারা নিজেরাই স্কুলের টাকা পয়সা বণ্টন করে থাকেন এবং স্কুলের ফান্ডে জমা দেন না। বিষয়টি আমি ইতোমধ্যেই জেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি। আমাকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এইসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom