দেশের মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না: মির্জা ফখরুল

আজ রবিবার বিকালে নয়াপল্টনে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ারি জারির প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।

দেশের মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকারের দমনপীড়নে ‘গণজাগরণ দমানো যাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রবিবার বিকালে নয়াপল্টনে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ারি জারির প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। দুপুর ২টা থেকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে যুবদলের নেতারা ব্যানার-ফেস্টুনসহ খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে জড়ো হন। তারা বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও তারেক রহমান দম্পতির গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। সমাবেশে গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ যুবদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হন। 
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাতে আমি গুরুত্ব দেই না। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য ওয়ারেন্ট, অসংখ্য মামলা এবং তার বিরুদ্ধে সাজা। তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তাতে কি তারেক রহমান সাহেবের কিছু যায় আসে। আর আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে তাকে গৃহে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এই মিথ্যা মামলা, এই হত্যা, এই অত্যাচার-নির্যাতনে কি আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পেরেছে? বাংলাদেশের মানুষকে কি দাবানো সম্ভব হয়েছে? হয়নি, হবেও না। একটা কথা আছে, সমুদ্রে নদীতে শয্যা, শিশিরে কিবা ভয়। আরে আমি তো সমুদ্রে বাসা বেঁধেছি, সেখানে এক কোনা শিশিরে আমি ভয় পাই না। আজকে সারাদেশের মানুষ ওই শপথ নিয়ে জেগে উঠেছে যে, ভয়াবহ দানবীয় এই কর্তৃত্ববাদী একনায়ক সরকারকে তারা হটাবেই। আমরা তারেক রহমান সাহেবকে ফিরিয়ে আনবো, এদেশের মানুষ ফিরিয়ে আনবে রাষ্ট্রনায়কের মতো করে, জুবাইদা রহমানকে ফিরিয়ে আনবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে। আমাদের দেশের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা আছে, সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার করবে। নতুন করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এবার ইনশাল্লাহ আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনব। আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু করব, আমরা একটা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা চাই, আমরা ভয়ভীতিমুক্ত একটা সমাজ চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলছি। আসুন যুবকরা জেগে উঠুন, তরুণরা জেগে উঠুন, সমস্ত মানুষ জেগে উঠুন। এই জাগরণে ওদেরকে পরাজিত করে গণতন্ত্রের বিজয় ঘটাতে হবে।
গত শনিবার বিএনপির বরিশালের সমাবেশের দুটি চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেদিন সমাবেশে একজন বয়স্ক মানুষ ৩ দিন ধরে শুয়ে ছিলেন, তার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, আপনি এতো কষ্ট করে কেন এসেছেন? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভালো মহিলা, বিএনপি ভালো দল, আমার ঘরে খাওয়া নেই, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমার ভাতের ব্যবস্থা হবে। অন্য আরেকজন বুড়ো মহিলা সমাবেশে এসেছিলেন বহু কষ্ট করে, তার কাছে জানতে চাওয়া হলো আপনি কেন এসেছেন মা? বুড়ো মা বলেন, আমি পরিবর্তন দেখতে এসেছি।  বিএনপি মহাসচিব বলেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন! বরিশাল যাবার পথে ইশরাকের গাড়ি বহরে হামলা করা হলো, অথচ তার বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হলো। তিনি বলেন, সারাদেশের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। কোনো বাধাই কাজে আসছে না। এ লড়াই গণতন্ত্র উদ্ধারের লড়াই, এ লড়াই মুক্তির লড়াই। এ সংগ্রামে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে ও সকল রাজনৈতিক দলকে এক হতে হবে, জাতিকে এ ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে উদ্ধার করতে হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন,  ভেবেছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করলে বিএনপি থাকবে না। তারেক রহমান রাজনীতিতে আসায় আপনাদের সহ্য হচ্ছে না। তাই না। কিন্তু আপনাদের সহ্য করতে হবে। তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন এবং এদেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবেন। এটা আপনাদের সহ্য করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে তারেক রহমানের মামলা কবর খুঁড়ে বের করা হয়েছে, আর আপনাদের দুর্নীতি প্রকাশ্যে হচ্ছে। এর সাক্ষী দেশের জনগণ। আজকে ওবায়দুল কাদের বলেন খেলা হবে, কার সঙ্গে খেলা হবে? বিএনপির সঙ্গে?  পারবেন না। সেই খেলায় পরাজিত হবেন, কারণ সমস্ত দেশের মানুষ বিএনপির সঙ্গে রয়েছে। তারেক রহমান আজকে দেশের মানুষকে দুর্নীতিবাজ সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন বলেই তাকে দমিয়ে রাখতে এত মামলার হিড়িক।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি,  গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব,  যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসাহাক সরকার,  দফতর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল, ছাত্রদলের সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।