জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলার মামলায় রাবির ৩ কর্মকর্তা গ্রেফতার

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলার মামলায় রাবির ৩ কর্মকর্তা গ্রেফতার

প্রথম নিউজ, রাবি: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলার আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে কর্মকর্তাদের ফ্যাসিস্টের দোসর অ্যাখ্যা দিয়ে নিজ নিজ কার্যালয় থেকে ধরে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে আসেন ‘জুলাই বিপ্লব চেতনা বাস্তবায়ন কমিটি’ নামে এক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে বেলা আড়াইটার দিকে প্রক্টর দপ্তর থেকে তাদের মতিহার থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

আটককৃত কর্মকর্তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সেকশন অফিসার পঙ্কজ কুমার, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের সহ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এবং উপ-পরিচালক আমিনুল হক। তাদের মধ্যে পঙ্কজ মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। বাকিদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও জুলাই বিপ্লব চেতনা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে প্রায় ২০-২৫ জন স্থানীয়দের একটি দল তাদের আটক করে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কার্যালয় থেকে আটক করে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে আসেন জুলাই বিপ্লব চেতনা বাস্তবায়ন কমিটি নামের একটি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। পরে দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান দপ্তরে উপস্থিত হলে পুলিশ প্রশাসন ও ওই সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানে তাদের নামে মামলা থাকায় পুলিশে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত হয়। তাদের বিরুদ্ধে নগরের বোয়ালিয়া একটি করে মামলা আছে। মামলাগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছিল। সেখানে মতিহার থানার পুলিশ প্রশাসনের কাছে তাদের সোপর্দ করা হয়।

কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার বলেন, আমার মহানগর আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক পদ ছিল। জুলাই-আগস্টে আমি বাড়ি থেকেই বের হয়নি। আমি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে হতাশায় ছিলাম। আজ হঠাৎ আমাকে অফিস থেকে এখানে ধরে আনা হয়। অর্থ ও হিসাব দপ্তরের সহ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। আওয়ামী সরকারের আমলে চাকরি নেওয়ায় আমাকে ধরে এনেছে তারা।

কর্মকর্তাদের আটক করার বিষয়ে জুলাই বিপ্লব চেতনা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গত এক সপ্তাহ আগে রেজিস্ট্রারকে স্মারকলিপি দিয়ে আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ৪০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলাম। এই কর্মকর্তারা ৫ আগস্টে আমার ভাইদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত। তবে এক সপ্তাহেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে আমরা নিজেরা উপস্থিত হয়ে ৩ জন কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছি। এ খবর পেয়ে বাকিরা পালিয়েছে। পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমাদের আর এখানে দেখবেন না। তবে সেটি না হলে আমাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।

গ্রেফতারের বিষয়ে নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় মামলা আছে। বোয়ালিয়া থানার সঙ্গে কথা বলে আমরা তাদেরকে গ্রেফতার করেছি। এখন আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ  বলেন, তাদের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা আছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, কেউ মামলার আসামি থাকলে পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে পরবর্তী সময়ে বাইরের লোকজন এসে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আটক করবে- এ সুযোগ দেওয়া হবে না। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই পুলিশের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।