‘মোটরসাইকেল হারালে মামলার কপি নিয়ে ডিবি অফিসে আসুন’

ডিবি প্রধান বলেন, অনেক থানার ওসি মনে করেন চুরির মামলা করলে তদন্ত করতে হবে, কষ্ট করতে হবে। যাদের মোটরসাইকেল হারায় তাদের বলবো, জিডি না করে মামলা করুন।

‘মোটরসাইকেল হারালে মামলার কপি নিয়ে ডিবি অফিসে আসুন’

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, মোটরসাইকেল চুরি হলে অনেকেই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। মোটরসাইকেল হারানোর পর মামলা করে কপি নিয়ে ডিবি অফিসে আসতে অনুরোধ করেছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে মোটরসাইকেল চুরি সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিবি প্রধান বলেন, অনেক থানার ওসি মনে করেন চুরির মামলা করলে তদন্ত করতে হবে, কষ্ট করতে হবে। যাদের মোটরসাইকেল হারায় তাদের বলবো, জিডি না করে মামলা করুন। মামলার পর আসামিকে আইনের আওতায় এনে মোটরসাইকেল উদ্ধারের চেষ্টা করবো।

এদিকে মোটরসাইকেল চুরি চক্রের মূলহোতা মো. জাকারিয়া হোসেন হৃদয়কে (২৫) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ১২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়ে।

ডিবি জানায়, গত ১০ মে ভাটারা থানায় একটি মোটরসাইকেল চুরি সংক্রান্ত মামলা হয়। সেই মামলার ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে ডিবির হাতে গ্রেফতার হোন জাকারিয়া। জাকারিয়া একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রের মূলহোতা। তার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল। এই চক্রটি মাত্র ২৫-৩০ সেকেন্ডে শপিংমলের সামনে থেকে চুরি করে নিয়ে যায়। এই চুরি করতে তারা একটি মাস্টার চাবি ব্যবহার করে। চাবিটি দিয়ে মাত্র ২৫-৩০ সেকেন্ডে লক ভেঙে মোটরসাইকেল স্টার্ট করে পালিয়ে যায়।

জাকারিয়া ছাড়া এই চক্রে আরও বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। বাকি পলাতক আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর, জিতু, ইকবাল, খালেক ও সুমন। বুধবার (২৪ মে) হবিগঞ্জে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে ডিবির গুলশান বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন সময় শপিংমলের সামনে থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলা হয় না। তবে যমুনা শপিংমলের সামনে থেকে কালো রঙয়ের একটি বাজাজ মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার পর মালিক মামলা করেন। মামলাটি হওয়ার পর আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। মোটরসাইকেলটি উদ্ধারের জন্য একটি গ্যারেজে অভিযান পরিচালনা করি।

অভিযানের সময় গ্যারেজের মালিক মোহন পালিয়ে যায়। তবে অভিযানে এই চোরচক্রের মূলহোতা জাকারিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, ঢাকা শহরসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় যত মোটরসাইকেল চুরি হয় এর সঙ্গে এই চক্রটি জড়িত।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে সুমন এই চক্রের রেকি সদস্য। সে বিভিন্ন শপিংমলের সামনে গিয়ে মোটরসাইকেল রেকি করে। মালিক মোটরসাইকেল রেখে শপিংমলের ভেতরে যাওয়ার পর অন্য সদস্যদের তিনি জানান। এই তথ্য পাওয়ার পর চক্রের সদস্য জিতু ও জাহাঙ্গীর তাদের কাছে থাকা মাস্টার চাবি দিয়ে মোটরসাইকেলটি চালু করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে চক্রের সদস্য খালেক মোটরসাইকেল নিয়ে বন্ধু মটরসের মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে বন্ধু মোটরসের মালিক ৫০-৬০ হাজার টাকায় আবার বিক্রি করে। চক্রটির কাছ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটির মূলহোতা জাকারিয়া জানান, তারা ঢাকা শহরের সব শপিংমলের সামনে থেকে এভাবে মোটরসাইকেল চুরি করে। তাদের একটি দোকান আছে, সেখান থেকে তারা মাস্টার চাবি সংগ্রহ করে এভাবে মোটরসাইকেল চুরি করে। তারা হবিগঞ্জের বন্ধু মোটরসে তাদের এই চুরির মোটরসাইকেলগুলো বিক্রি করে।

ডিবি প্রধান বলেন, আমরা ডিবির পক্ষ থেকে সবাইকে বলছি ১০ টাকা লাগলেও মোটরসাইকেল সব সময় পার্কিংয়ে পার্ক করবেন। তারপরেও যদি চুরি হয়ে যায়, তাহলে থানায় জিডি নয় মামলা করবেন। এরপর কপি নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে আসুন।