কোরবানির আগেই গরুর দাম বাড়ার শঙ্কা

দফায় দফায় গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এবারো কোরবানির পশুর দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

কোরবানির আগেই গরুর দাম বাড়ার শঙ্কা

প্রথম নিউজ, পাবনা: দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। আত্মত্যাগের এ ধর্মীয় উৎসবের জন্য কোরবানির পশু হিসেবে তালিকার শীর্ষে থাকে গরু। তাই কোরবানি এলেই চাহিদা বাড়ে গরুর। একইসঙ্গে গরুর দরদাম নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। তবে দফায় দফায় গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এবারো কোরবানির পশুর দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

খামারিরা জানান, দফায় দফায় বেড়েই চলছে গো-খাদ্যের দাম। চলতি বছর খামারিদের দৈনিক খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এজন্য গো-খাদ্য মিলার ও কোম্পানির মালিকদের দুষছেন খামারিরা। গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির পশু পালনে যে খরচ বেড়েছে সে অনুযায়ী ন্যায্যমূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের লোকসানের শঙ্কা রয়েছে। তাই লোকশান এড়াতে কোরবানির হাট টার্গেট করেছেন খামারি-ব্যবসায়ীরা।

 কোরবানি ঈদের আগেই ঈশ্বরদীর পশুর হাটগুলোতে গরুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। এক মাসের ব্যবধানে গরুপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। 

খামারিরা গত দুই বছরের গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা গমের ভুসির এখন বাজারমূল্য ২ হাজার ২০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা, দুই বছর আগে ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। ৭৪ কেজির এক বস্তা খৈল ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। ৫০ কেজি ওজনের ধানের গুঁড়ার বস্তা ৯০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৭০০ টাকা। প্রতি কেজি খড় ১৫ টাকা, আগে ছিল ১০ টাকা। এছাড়া খেসারি ও ছোলার ভুসির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। গত ১০ বছরে সাত থেকে আট দফা গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। খামার শ্রমিকদের দুই বছর আগে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন ছিল। এখন কোনো শ্রমিক ১৫ হাজারের নিচে কাজ করতে চায় না।

খরচ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ খামার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এছাড়া ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা গরু পালন করে খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না।

ঈশ্বরদী পৌর এলাকার অরণকোলা ওয়ান স্টপ ক্যাটল র‌্যান্স ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া সোহান বলেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা লাভবান হতে পারছে না। একটি উন্নত জাতের বাছুর কিনতে ১ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। সেটি দুই বছর লালন-পালন করে কোরবানির জন্য উপযোগী করা হয়। খামারে একটি ষাঁড় গরু একবছর পালন করতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। দুই বছর পালনে খরচ হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। বাছুরের মূল্যসহ খাবার খরচ হিসাব করলে গরুর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা।

সেই গরু হাটে তুললে দাম ওঠে ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এভাবেই খামারিরা প্রতিবছর লোকসান গুনছেন। সরকারের কাছে খামারিদের একটিই দাবি, গো-খাদ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। তা নাহলে প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়ে খামারিরা গরু পালন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। অরণকোলার মুনতাহা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী বাচ্চু প্রামাণিক বলেন, গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ শ্রমিকদের মজুরি খরচ মিটিয়ে খামারিরা লাভবান হতে পারছেন না। চলতি বছর ভালোমানের ভুসি ২ হাজার ২০০ টাকা বস্তা। অথচ গত বছর দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। ৭০ কেজি খৈলের বস্তার দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ এবার তা ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। গো-খাদ্যের দাম অনুযায়ী গরুর দাম বাড়েনি। এভাবে চলতে থাকলে গরু পালন খুব কষ্টকর হবে।

ফতেহ মোহাম্মদপুর এম এস কলোনির গরু খামারি সাবিনা খাতুন বলেন, প্রতি বছর নিজ বাড়িতে তিন-চারটি গরু পালন করি। গো-খাদ্যের দাম বেশি তাই এখন আর গরু পালন করে লাভ হচ্ছে না। সারাবছর ভুসি-খৈল কিনে যে টাকা খরচ করি বছর শেষে গরু বিক্রি করে সে টাকা একবারে পাই। এতে মনে হয় কিছুটা লাভ হয়েছে। কিন্তু গো-খাদ্যের দাম ও লালন পালনের পরিশ্রমের মূল্য হিসাব করলে গরু পালন করে লাভ হয় না। তবুও বাড়ির কাজের পাশাপাশি গরু পালন করছি। গরু লালন আমাদের এক ধরনের শখ ও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

অরণকোলার গরু ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, কোরবানি ঈদের আগেই ঈশ্বরদীর পশুর হাটগুলোতে গরুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। এক মাসের ব্যবধানে গরুপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। কোরবানির হাট শুরুর আগেই গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে এবার দাম চড়া হতে পারে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, যারা প্রকৃত খামারি তাদের গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে উন্নতমানের ঘাসের আবাদ করতে হবে। এতে গো-খাদ্যের খরচ বেশ কমে যাবে। পাশাপাশি ঘাস গরুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যেসব খামারি শুধু ভুসি, খৈল, খড়ের মতো গো-খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল তাদের গরু পালন করে লাভবান হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।